Thursday, February 28, 2013

বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-দ্বিতীয় অংশ





লেখাটি ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’AhanLipi-Bangla14 ফন্টে পড়লে লেখাটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে৤




অনধিকারীর এই চেষ্টায় 
চিন্তার অনেক খামতি অবশ্যই আছে৤




বাংলা নতুন-বানান  Bangla Natun-Banan-  দ্বিতীয় অংশ

           (চারটি অংশ)

বাংলা ইউনিকোড ফন্ট “অহনলিপি-বাংলা১৪” বিনামূল্যে ডাউনলোড করুন৤ লিংক :

https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip


কিংবা

https://sites.google.com/site/ahanlipi/


অথবা --
  


 বাংলা নতুন-বানান রীতি প্রয়োগ করে লিখবার জন্য AALOY-Font Group.zip থেকে অতিরিক্ত কিছু ইউনিকোড ফন্ট ডাউনলোড করুন৤ অহনলিপি-বাংলা(AhanLipi-Bangla) কিবোর্ড ব্যবহার করতে হবে৤  

https://sites.google.com/site/ahanlipi/home/bangla-natun-banan-font/AALOY-FontGroup2014.zip


    

বাংলা নতুন-বানান 

(দ্বিতীয় অংশ)

বাংলা নতুন-বানান -২৪

[ দ্বিতীয় অংশ ]



মনোজকুমার দ. গিরিশ৤
মণীশ পার্ক, 
কোলকাতা, ভারত



৽৽


 .... ব-১৭.৪ফলা ব্যবহার  ....  (চলছে)


ব-১৭.৪.৭৤ রেফ থাকবে না, এবং রেফের জন্য বিশেষ চিহ্ন রেফ 

 ব্যবহৃত হবে না৤ ফলা তথা যুক্তবর্ণের পূর্ববর্ণ হল রেফ(যুক্তবর্ণ=পূর্ববর্ণ + পরবর্ণ )৤


র্ঋ--নৈর্ঋত=নৗ(ই)৒রীত  , নির্ঋতি=নী৒রীতী
[র্ঋ আসলে যুক্তবর্ণ নয়, কারণ এখানে ঋ স্বরবর্ণ, যেমন ক+ী=কী৤ এটি যুক্তবর্ণ নয়৤ র+ঋ=র্ঋ এখানে র বর্ণটি রেফ চিহ্ন হিসেবে ঋ-এর উপরে বসেছে৤ ঋ স্বরবর্ণ৤ এটির রূপ যদি রৃ হত তবে বুঝতে সুবিধে হত৤]
র্ক--অর্ক=অ৒ক
র্খ--মূর্খ=মু৒খ
র্গ--বর্গা=ব৒গা
র্ঘ--দীর্ঘ=দী৒ঘ
র্চ--চর্চা=চ৒চা
র্ছ--মূর্ছা=মু৒ছা
র্জ--গর্জন=গ৒জন
র্ঝ--নির্ঝর=নী৒ঝর
র্ট--শার্ট=শা৒ট্
র্ড--গার্ড=গা৒ড্
র্ণ--পর্ণ=প৒ন৚/প৒ন৹, [ পরন কথা= পরন কথা], কর্ণাট=ক৒নাট
র্ত--শর্ত=শ৒ত৚/শ৒ত৹ [শরৎ=শরৎ]
র্থ--অর্থ=অ৒থ, ব্যর্থ=ব৙঄৒থ
র্দ--ফর্দ=ফ৒দ
র্ধ--অর্ধ=অ৒ধ


র্ন--দুর্নয়=দু৒নয়, বর্ন্(born)=ব৒ন্৤ (বর্ণ রঞ্জিত=ব৒ন৹ রন্জীত৹-- রন্জীৎ  নহ৙৤ নাম হিসেবে রন্জীৎ
    চলে৤ রণজিৎ=রন৹জিৎ অন্য অর্থের শব্দ)
র্প--সর্প=শ৒প, শার্প(sharp)=শা৒প্
র্ফ--অর্ফিউস=অ৒ফীউস/শ
র্ভ--নির্ভয়=নী৒ভয়
র্ম--কর্ম=ক৒ম৚/ক৒ম৹ [করম্=করম্]
          তিন বর্ণে গঠিত শব্দের প্রথম ধ্বনি হলন্ত হলে, প্রথম দলে(Syllable) যুক্তধ্বনি হবে৤ এক্ষেত্রে যুক্তধ্বনি অবিভাজ্য তথা সান্দ্র হবে৤ দল হবে দুটি৤ যেমন--(ক্রম)ক্‌রম=ক্‍রম্৤ আর দ্বিতীয়টি হলন্ত হলে, দ্বিতীয় দলে যুক্তধ্বনি হবে৤ দল হবে দুটি৤ যেমন--(কর্ম)কর্‌ম৹= ক৒ম৚/ক৒ম৹৤ সাধারণভাবে যুক্তধ্বনির উচ্চারণ স্বরান্ত হয়৤ যুক্তধ্বনি না-হলে শব্দ শেষের ধ্বনি সাধারণত হলন্ত তথা ব্যঞ্জনান্ত হয়৤ তাই তিন বর্ণের শব্দের উচ্চারণ হবে-- ক র ম্= ক৹র৹ম্৤ অর্থাৎ তিন বর্ণে গঠিত শব্দে, হলন্ত ধ্বনি উচ্চারণ হবে 
অবস্থান-অনুযায়ী--
          ক্ র ম  ক্রম(উচ্চারণ ক্‍রম্, প্রথম [এবং তৃতীয়] বর্ণ হলন্ত)
          র্  কর্ম(উচ্চারণ ক৒ম৹, দ্বিতীয় বর্ণ হলন্ত)
          ক র ম্  করম(উচ্চারণ ক৹র৹ম্, তৃতীয় বর্ণ হলন্ত) 




বাংলা নতুন-বানান -২৫



র্য--কার্য=কা৒জ/কা(ই)৒জ
র্ল--নির্লজ্জ=নী৒লজ্জ
র্ব--গর্ব=গ৒ব, [কিন্তু গর৹ব=গর৹ব্], সর্ব=শ৒ব [কিন্তু সর৹ব=শর৹ব্]
র্শ--দর্শন=দ৒শন [কিন্তু দর৹শন=দর৹শন্/দর৹শ৹ন৹]
র্ষ--হর্ষ=হ৒শ [কিন্তু হরষ=হর৹শ্] যুক্তধ্বনি না হলে শব্দ শেষের ধ্বনি সাধারণত হলন্ত তথা
         ব্যঞ্জনান্ত হয়৤
র্স--উর্সনি=উ৒শনী
র্হ--অন্তর্হিত=অন্ত৒হীত
র্ৎ--ভর্ৎসনা=ভ৒ৎশনা, কার্ৎস্ন্য=কা৒ৎস্ন/কা৒ত্‌স্ন


*** তিন বর্ণের সংযোগ (১৩টি) ***
র্ক্ক--কর্ক্কট=ক৒কট
র্ক্ত--অগ্রবর্ক্তী=অগ্‍রব৒কতী/অগ্‍রব৒ক্তী
র্ঙ্গ--শার্ঙ্গদেব= শা৒ঙ্গদ৙ব [এই একটি মাত্র শব্দে নতুন বানানে ঙ্= পূর্ববর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে,  
                অন্য আর কোথাও নয়৤]  
র্চ্চ--চর্চ্চা=চ৒চা
র্চ্ছ--মূর্চ্ছা=মু৒ছা
র্জ্জ--বর্জ্জিত=ব৒জীত
র্জ্ঞ--দুর্জ্ঞেয়=দু৒গ৙৺য়  
র্ত্ত--বর্ত্তমান=ব৒তমান
র্দ্দ-দুর্দ্দশা=দু৒দ্শা
র্দ্ধ--অর্দ্ধ=অ৒ধ
র্ব্ভ----গর্ব্ভ=গ৒ভ (সাধারণ হাতে কম্পোজ করার মুদ্রণে সকল যুক্তবর্ণ সহজলভ্য নয়৤ তা ছাড়া, X-Height-এর ব্যাপারটিও কতটা অসুবিধাজনক তা সহজেই বোঝা যাবে৤ X-Height হল, মোটামুটি ইংরেজি X অক্ষরের উচ্চতার মধ্যে লেখার বা ছাপার সকল হরফ এঁটে যাওয়া, বা মূল গঠনকে ধরা৤)
  X ---ABCDEFGHIJKLMNOPQRSTUVWXYZ,   
x --- abcdefghijklmnopqrstuvwxyz,  
 ব -- কটতলঠলুসিন্‌র্দু  





  


     
          বাংলায় যুক্তবর্ণ গঠনের বর্তমান রীতির ফলে বাংলা চলতি হরফ-গঠনের সবটা দুটি সমান্তরাল সরল রেখার মধ্যে এঁটে যাওয়া সম্ভব নয়, বা মূল গঠনকেও ধরা সম্ভব নয়৤ উপরে নতুন গঠনের হরফের তল-রেখা এবং শিরোরেখাটি দেখলে হরফসমূহের অবস্থানও স্পষ্ট হবে৤ এখানে স্পষ্টতই বোঝা যাবে যে হরফের এক্স-হাইট অনেক বড় হয়েছে৤

র্ষ্ট--ধার্ষ্টামো=ধা৒শ্টামৗ
র্স্ট--আমহার্স্ট=আমহা৒শ্ট্





বাংলা নতুন-বানান -২৬

ব-১৭.৪.৮৤ ল-ফলা থাকবে না, এবং ল-ফলার জন্য বিশেষ চিহ্ন 
ব্যবহৃত হবে না৤ 


ক্ল--শুক্ল=শুক্ল
গ্ল--গ্লানি=গ্লানী
প্ল--বিপ্লব=বীপ্লব
ফ্ল--ফ্লানেল=ফ্লান৙ল, ফ্ল্যাট=ফ্ল৙঄ট
ব্ল--ব্লেড=ব্ল৙ড
ভ্ল--ভ্লাদিমি=ভ্লাদীমী 
  নয়৤ 
ম্ল--অম্ল=অম্ল, ম্লান=ম্লান [অমল=অমল]
ল্ল--মল্ল=মল্ল
ব্ল--ব্লগ=ব্লগ, ব্লেড=ব্ল৙ড
শ্ল--শ্লথ=শ্লথ
স্ল--স্লেট=স্ল৙ট/স৙ল৙ট/শ৙ল৙ট
হ্ল--হ্লাদিনী=হ্লাদীনী

*** তিন বর্ণে সংযোগ (দুটি) ***
র্ল্ল--দুর্ল্লভ=দু৒লভ
স্প্ল--স্প্লেনডিড=স্প্ল৙নডীড (সাধারণ মুদ্রণে যুক্তবর্ণযেন দলা পাকিয়ে আছে৤)



ব-১৭.৪.৯৤ অন্তঃস্থ ব-ফলা থাকবে না, এবং ব-ফলার জন্য বিশেষ চিহ্ন
  ব্যবহৃত হবে না৤ 
            
মধ্যে এবং অন্ত্যে ব্যবহৃত অন্তঃস্থ ব-ফলা হবে ধ্বনির দ্বিত্ব, অথবা যেমন প্রয়োজন তেমনি             লিখতে হবে৤ (দ্রষ্টব্য -- ব-১৭.৪.৩, পৃঃ-১৮

ক্ক--পক্ক=পক্ক, পক্কাশয়=পক্কাশয়
গ্ব--দিগ্বসন=দীগ্বশন, ঋগ্বেদ=৒রীগ্ব৙দ
ঘ্ব--লঘ্বী=লঘ্ঘী
জ্ব--জ্বর=জর, জ্বালা=জালা
ট্ব--খট্বা=খট্টা, পট্বী=পট্টী
ড্ব--অনড্বান=অনড্ডান
ণ্ব--অণ্বী=অন্নী
ত্ব--ত্বক=তক/ত্তক, স্বত্ব=শত্ত [সত্য=শৗত্ত] [সতত=শতত]
থ্ব--পৃথ্বী=প্‍রীথ্থী
দ্ব--দ্বন্দ্ব=দন্দ, দ্বার=দার/দ্দার, দ্বিত=দীত্ত, উদ্বৃত্ত=উদ্ব্‍রীত্ত, দ্বেষ=দেশ/দ্দ৙শ
ধ্ব--বিধ্বস্ত=বীধ্ধস্ত, ধ্বান্তারি=ধান্তারী, ধ্বনি=ধনী/ধ্ধনী
ন্ব--অন্বয়=অন্নয়, তন্বী=তন্নী
ব্ব--সব্ব(বর্গীয় ব+অন্তঃস্থ ব ৱ)=শব্ব(বাংলায় দুই ‘ব’-এ কোনও তফাত নেই)
ল্ব--অকিল্বিষ=অকীল্লীশ (অকীল্বীশ ?), বিল্ব=বীল্ল
শ্ব--বিশ্ব=বীশ্শ, শ্বাপদ=শাপদ
ষ্ব--অগ্নিষ্বাত্ত=অগ্নীশ্শাত্ত/অগ্নীশাত্ত, পিতৃষ্বসা=পীত্‍রীশ্শশা
স্ব--স্বর=শ্শর/শর, স্বাক্ষর=শাখ্খর(সই Signature), [সাক্ষর=শাখ্খর(অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন   Literate)], স্বীয়=শীয়, স্বেদ=শ৙দ/শ্শ৙দ, স্বৈরাচার=শৗইরাচার
হ্ব--গহ্বর=গওভর/গব্ভর, জিহ্বা=জীউভা/জীব্ভা(অন্তঃস্থ ব-এর[ৱ] মূল উচ্চারণ-- ওয়[w], বাংলায় এই উচ্চারণ নেই৤)
ক্ষ্ব--ইক্ষ্বাকু=ইখ্খাকু, ক্ষ্বেড়=খ৙ড়




বাংলা নতুন-বানান -২৭

*** তিন বর্ণের সংযোগ (১৪) ***

চ্ছ্ব--উচ্ছ্বাস=উছ্ছাশ (সাধারণ মুদ্রণে যুক্তবর্ণযেন দলা পাকিয়ে আছে৤)
জ্জ্ব--উজ্জ্বল=উজ্জল(সাধারণ মুদ্রণে যুক্তবর্ণযেন দলা পাকিয়ে আছে৤)
ত্ত্ব--তত্ত্ব=তত্ত/তৎত, মহত্ব=মহত্ত, সত্ত্ব=শত্ত, স্বত্ত্ব=শত্ত                                [সত্তা=শত্তা/শৎতা], [সত্তর ৭০=শত্তর], [সত্বর=শৗত্তর], [সত্য=শৗত্ত] [সততা=শততা] (“৩৩৩তম তত্ত্ব কথা” লিখতে গেলে নতুন গঠনের হরফে মাত্রা নেই বলে অসুবিধা হবে৤  
৩৩৩তম তত্ত্ব কথা ) 

দ্দ্ব--তদ্দ্বারা=তদ্দারা
দ্ধ্ব--উদ্ধ্বস্ত=উধ্ধস্ত (সাধারণ মুদ্রণে যুক্তবর্ণযেন দলা পাকিয়ে আছে৤)
ন্ত্ব--সান্ত্বনা=শান্তনা
ন্দ্ব--দ্বন্দ্ব=দন্দ, প্রতিদ্বন্দ্বী=প্‍রতীদ্দন্দী
র্দ্ব--নির্দ্বন্দ্ব=নী৒দন্দ
র্ধ্ব--ঊর্ধ্ব=উ৒ধ
র্ব্ব--শর্ব্বরী=শ৒বরী
র্শ্ব--পার্শ্ব=পা৒শ
ষ্ক্ব--নিষ্ক্বাথ=নীশ্কাথ (সাধারণ মুদ্রণে যুক্তবর্ণযেন দলা পাকিয়ে আছে৤)

স্ত্ব--অন্তস্ত্বক=অন্তস্তক
র্দ্ধ--ঊর্দ্ধ্বে=উ৒ধ৙, ঊর্দ্ধাধঃ=উ৒ধাধ (সাধারণ মুদ্রণে যুক্তবর্ণযেন দলা পাকিয়ে আছে৤)



[যা প্রায় লেখা যায় না, ছাপা হলেও পড়ে বোঝা কঠিন, বলা অর্থাৎ উচ্চারণ করা যায় না, তাও কিন্তু আছে বলে আমরা ধরে নিয়েছি৤]


ব-১৭.৫.১৤ ক্ষ=খ, খ্খ/খ্‌খ৤ শব্দের শুরুতে ক্ষ=খ, অন্যত্র ক্ষ=খ্খ/খ্‌খ
        ক্ষ--ক্ষমা=খমা, ক্ষুদ্র=খুদ্‍র, ক্ষুধা=খুধা, ক্ষৌর=খৗউর, ক্ষৌরি=খৗউরী, ইক্ষু=ইখ্খু,         পরীক্ষা=পরীখ্খা, রুক্ষ=রুখ্খ, সাক্ষর=শাখ্খর(অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন, Literate), স্বাক্ষর=শাখ্খর(সই, Signature)


ব-১৭.৫.২৤ জ্ঞ=গঁ(শব্দের শুরুতে),  গ্গঁ(অন্যত্র)
        জ্ঞ--জ্ঞাত=গ৙঄৺ত, জ্ঞান=গ৙঄৺ন, বিজ্ঞান=বীগ্গাঁন/বীগ্গ৙঄৺ন, বৈজ্ঞানিক=বৗইগ্গাঁনীক,         অনুজ্ঞা=ওনুগ্গাঁ, যজ্ঞ=জৗগ্গঁ/জগ্গঁ


ব-১৭.৬৤ য-ফলা, র-ফলা, এ্যা, এবং অনুস্বার, বিসর্গ, চন্দ্রবিন্দু সংযোগ-- 
ক্যং--বাক্যাংশ=বাক্ক৙঄৾শ
ক্রং--বক্রাংশু=বক্‍রাংশু
ত্যং--বৃত্যংশ=ব্‍রীত্তংশ   
ত্র্যং--ত্র্যংশ=ত্‍রংশ
ত্রং--ত্রিংশ=ত্‍রীংশ
দ্ব্যং--দ্ব্যংশ=দ৙঄৾শ/দ৖৾শ
দ্যঃ--সদ্যঃ=শৗদ্দ
দ্রং--ক্ষুদ্রাংশ=খুদ্‍রাংশ
ন্ত্যং--ক্রান্ত্যংশ=ক্‍রান্তংশ/ক্‍রান্ত৖৾শ



বাংলা নতুন-বানান -২৮

ন্দ্রং--চন্দ্রাংশু=চন্দ্‍রাংশু
ন্ধ্যং--সন্ধ্যাংশ=শন্ধ৙঄৾শ
প্রং--শালপ্রাংশু=শালপ্‍‍রাংশু
ফ্রঁ--ফ্রাঁসোয়া=ফ্‍রাঁশৗয়া/ফ্‍রাঁসৗয়া
ব্যাং--ব্যাংক=ব৙঄৾ক
ব্যাঁ--ব্যাঁকানো=ব৙঄৺কানৗ, ব্যাঁটরা=ব৙঄৺টরা   
ব্বঃ--বাব্বাঃ=বাব্বাঃ/বাব্বাহ্(সবই বর্গীয় ব) [এখানে বিসর্গ(ঃ) স্থানে হ্ না লেখাই ভালো]
ব্যং--ব্যংসক=ব৙঄৾শক
ব্র্যা--ব্র্যাকেট=ব্‍র৙঄ক৙ট
ব্রঁ--রেমব্রাঁ=র৙মব্‍রাঁ (Rembrandt)
ব্ল্যা--ব্ল্যাকবোর্ড=ব্ল৙঄কবৗ৒ড্
ভ্যং--লভ্যাংশ=লৗভ্ভ৙঄৾শ/লৗভ্ভাংশ
ভ্রং--ভ্রংশ=ভ্‍রংশ
র্গ্যা--অর্গ্যান=অ৒গ৙঄ন
র্জ্জঃ--ঊর্জ্জঃ=উ৒জ (-- সাধারণ মুদ্রণে সকল যুক্তবর্ণ সহজলভ্য নয়, কারণ হাতে কম্পোজ করার ছাপাখানায় যুক্তবর্ণের টাইপ দু-তিনটে হরফ মিলিয়ে দলা পাকানো মণ্ডপ্রায়হরফ ঢালাই/মোল্ড করা থাকে৤ সব সময়ে ছাপাখানায় তা সহজ লভ্যও নয়৤ আর কম্পিউটারেও প্রায় একই ব্যাপার, কম্পিউটারের মেমোরিতে যুক্তবর্ণের দলা পাকানো টাইপ[প্রায় যেন সেই ছাঁচে ঢালাই ব্যবস্থা!] আগে থেকে গঠন করা থাকে৤ যদি কোন যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রে আগে থেকে তা করা না থাকে, তবে অসুবিধে দেখা দেয়৤ কিন্তু “অহনলিপি-বাংলা” ফন্টে স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ ব্যবস্থা এমন যে এতে সেই অসুবিধা একেবারেই নেই৤ ভবিষ্যতেও সকল অনাগত, এবং অভাবিত যুক্তবর্ণ এখানে অতি সহজেই গঠন করা যাবে৤
যেমন ধরি, 
ম+ট হবে ম্ট

কিংবা  ল+ক+ধ হবে ল্ক্ধ )৤

 

র্জঃ--ঊর্জঃ=উ৒জ
র্ণঃ--অর্ণঃ=অ৒ন
র্থং--চতুর্থাংশ=চতু৒থাংশ
র্দ্ধাং--অর্দ্ধাংশ=অ৒ধাংশ
র্দঃ--বুর্দঃ=বু৒দ
র্ধং--অর্ধাংশ=অ৒ধাংশ
র্পঃ--সর্পিঃ=শ৒পী
র্ব্বং--সর্ব্বাংশ=শ৒বাংশ
র্বং--সর্বাঃশ=শ৒বাংশ
র্ভঃ--আর্ভিং=আ৒ভীং
র্ম্যা--নর্ম্যান্ডি=ন৒ম৙঄ন্ডী
র্মং-বার্মিংহ্যাম=বা৒মীংহ৙঄ম
র্লং--ফার্লং=ফা৒লং, ডার্লিং=ডা৒লীং
র্শঃ--অর্শঃ=অ৒শ
র্সঃ--অর্সঃ=অ৒শ
র্হঃ--বর্হিঃ=ব৒হী [কিন্তু বহির্ভাগ=বহী৒ভাগ আদালা শব্দ]
ল্যাং--ল্যাংচা=ল৙঄৾চা
শ্বঃ--পরশ্বঃ=পরশ্শ [পরস্ব=পরশ্শ]
স্ট্রং--স্ট্রং=শ্ট্‍রং, স্ট্রিং=শ্ট্‍রীং [স্ট নহ৙ -- শ্ট৤ নচেৎ ‘স্ত’ উচ্চারিত হবে৤]
স্ত্রং--চতুস্ত্রিংশ=চতুস্ত্‍রীংশ
স্প্রং--স্প্রিং=স্প্‍রীং
স্বঃ--স্বঃ=শ/শ্শ৤ (শ-বীরৗধ/শ্শ-বীরৗধ) [শ্ব-- শ্শ]
স্রং--স্রংসন=স্‍রংশন
স্ল্যা--স্ল্যাকস্=স্ল৙঄কস্
স্ল্যাং--স্ল্যাং=স্ল৙঄৾

বাংলা নতুন-বানান -২৯

ব-১৮.১৤ শব্দান্তে পাশাপাশি দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি হলে:--
          ক্যাস্‌ল্(castle)=কাস্‌ল্/ক৙঄স্‌ল্/ক৙঄স৙ল্  
          বট্‌ল্(bottle)=বট্‌ল্
          ডিস্ক(Disc / Disk)=ডীস্ক্/ডীস্‌ক্
          ডিস্কস্(Discs)=ডীস্ক্‌স্ (দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি এবং বহুবচন)        
          ডিস্কজ(Disks)=ডীস্ক্‌জ্ (দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি এবং বহুবচন)
          ফিক্স/ফিক্‌স্(fix)=ফীক্স্
          ফিক্সট(fixed)=ফীক্স্‌ট্ (উচ্চারণ ফীক্সড্ নহ৙) 
          কর্নফ্লেকস(cornflakes)=ক৒ন্‌ফ্ল৙কস্ 
আবার, সাধারণ ক্ষেত্রে বহুবচন বোঝাতে --
     পোয়েটিকস্(poetics)=পৗয়৙টীকস্(ক্ স্ অথবা ক্স্ লেখার দরকার নেই)
     স্ল্যাকস্(slacks)=স্ল৙঄কস্ (ক্ স্ অথবা ক্স্ লেখার দরকার নেই)

ব-১৮.২.১৤ এ আর এ-কার (ে) ‍
                                       
          এই=এই                   কেশ=ক৙শ
          একুশ=একুশ              খেলি=খ৙লী
          এখান=এখান               ছেনি=ছ৙নী
          এজাহার=এজাহার        জেলা=জ৙লা
          এটা=এটা                  টেপা=ট৙পা
          এতে=এত৙                দেশ=দ৙শ
          এবং=এবং                 নেশা=ন৙শা
          এর=এর                   পেট=প৙ট
          এলেম=এল৙ম             ফেলি=ফ৙লী
          এষা=এশা                 মেষ=ম৙শ
          এস, এসো=এশৗ          রেল=র৙ল
          এয়ো=এয়ৗ                 সেলাই, শেলাই=শ৙লাই
          এঁদো=এঁদৗ                 হেঁট=হ৙৺ট
                                      ইত্যাদি=ইত্ত৙঄দী        

ব-১৮.২.২৤এা আর এা-কার(৙঄):--
     এা                               এা-কার(৙঄)
এক=এাক(১)              কেন=ক৙঄ন/ক৙঄ন৹/ক৙঄নৗ [কেন(হলন্ত ন্ হলে=ক৙঄ন্) ]
এখন=এাখন               কেমন=ক৙঄মন
এগার=এাগারৗ(১১)         খেলা=খ৙঄লা
এত=এাত                  চেঁচানো=চ৙঄৺চানৗ
এমন=এামন               ছেঁকা=ছ৙঄৺কা
এড়ানো=এাড়ানৗ           জেঠামি=জ৙঄ঠামী
                           টেরা=ট৙঄রা
                           ঠেলা=ঠ৙঄লা
                           দেখা=দ৙঄খা
                           নেকা=ন৙঄কা
                           ফেনা=ফ৙঄না
                           বেচা=ব৙঄চা
                           লেংড়া=ল৙঄৾ড়া  ইত্ত৙঄দী 

বাংলা নতুন-বানান -৩০

ব-১৮.২.৩৤ পৃথক শব্দ বোঝাতে ‘ও’ ব্যবহার হবে, ও-কার হবে না৤ অন্যত্রও “ও” (=অধিকন্তু) বোঝাতে হলে, ‘ও’ হবে, ও-কার (ো) হবে না৤
             হবে না                     হবে
          অংশো ছিল               অংশও ছীলৗ
          এখনো ছিল               এাখনও ছীলৗ
          কখনো না                  কখনও না
          কারো কথা                 কারও কথা
          কোনো কথা               কৗনও কথা
          তখনো এখন              তখন ও এাখন
          তখনো হবে               তখনও হব৙
          ধারো করে                 ধারও কর৙  (অসমাপিকা ক্রিয়া হলে হবে--
                                                ধারও কৗর৙ কূল পাবেনা [করীয়া])
          যখনো হোক              জখনও হৗক



ব-১৮.২.৪৤ “ই” বোঝাতে ই-কার(ি) হবে না৤   
              হবে না                        হবে
          এখনি হোক                   এাখনই হৗক
          কখনি না                      কখনও-ই না
          কারিবা দোষ                  কারই-বা দৗশ
          তখনি হবে                   তখনই হব৙
          তাঁরি ঘর                     তাঁরই ঘর
          ধরো, হারি হল              ধরৗ, হার-ই হৗলৗ
          ভাতি খাব                    ভাতই খাবৗ
          যখনি হোক                  জখনই হৗক
          রাস্তা আগে পারি হোক     রাস্তা আগ৙ পারই হৗক

ব-১৮.২.৫৤ দৃঢ়তা বোঝাতে “-ই” প্রয়োগ --
এইই=এই-ই = আমী জানতাম শ৙শ অবধী এই-ই হব৙৤
ওইই=ওই-ই =জ৙ত৙ দাও শ৙শ অবধী ওই-ই পস্তাব৙৤
খাইই=খাই-ই =দ৙খ৙ছ ব৙঄টার কীছুত৙ খাই-ই ম৙ট৙ না৤
তাই/তাইই=তা-ই/তাই-ই =হুঁ, জা বৗলব৙ ঠীক তা-ই/তাই-ই চাই?
দইই=দই-ই = শ৙ কী, দই-ই খ৙ল৙ না, শবচ৙য়৙ ওটাই জ৙ ভালৗ হয়৙ছ৙৤
দুইই=দুই-ই = কাক৙ কী বৗলব৙, দুই-ই শমান৤
নাই=না-ই =না-ই কর৙ছিলাম, হাত৙ পায়৙ ধরল তাই গ৙লাম৤
যাই=জা-ই =জা-ই বলৗ দৗশ তৗমারই৤
লাইই=লাই-ই =ছ৙ল৙ক৙ ক৙঄বল লাই-ই দীচ্ছ, পর৙ বুঝব৙ মজা৤
হাঁই=হাঁ-ই = তার ইচ্ছ৙টা পুরৗ মাত্‍রায় আছ৙, শ৙ হাঁ-ই বলব৙৤


বাংলা নতুন-বানান -৩১

ব-১৮.২.৬৤ “-এক”, “-এাক” প্রয়োগ -- 
হবে না                          হবে
কয়-এক                কয়েক=কয়৙ক দীন পর৙ এশৗ৤
ছয়-এক                ছয়েক=গৗটা ছয়৙ক প৙ল৙ হব৙ কী?
নয়-এক                নয়েক=হাত৙ আছ৙ গৗটা নয়৙ক মৗট৙৤
আর একটা(?)        আরেকটা/আর-একটা=আর৙কটা/আর-এাকটা দাঁও ম৙র৙ছ৙৤

ব-১৮.২.৭৤ “-এর” প্রয়োগ --
শব্দের শেষে এ-কার থাকলে পৃথকভাবে ‘-এর’ দেখাতে হবে
দাভের            দাভে-এর=দাভ৙-এর[দাভ৙-র] শংগ৙ মৗলাকাৎ৤
পুনের            পুনে-এর=পুন৙-এর[পুন৙-র] কাছ৙ বাড়ী৤
মাত্রের           মাত্রে-এর= এাক৙বার৙ ঠীক মাত্‍র৙র[মাত্‍র৙-র] মতৗ দ৙খত৙৤
মুচিরাম গুড়ের   মুচিরাম গুড়ে-এর= মুচীরাম গুড়৙-এর[গুড়৙-র] পদাবলী৤
শাঠের           শাঠে-এর=শাঠ৙-এর[শাঠ৙-র] জবানবন্দী৤
          এখানে দাভ৙, পুন৙, মাত্‍র৙, গুড়৙, শাঠ৙ হবে না৤ হাইফেন সহ -এর’ অথবা হাইফেন সহ -রজুড়তে হবে৤


ব-১৮.২.৮(১)শব্দমধ্যে  মুক্ত (অথবা ) হবে না৤ যেমন --
 হবে না                             হবে
এডওআর্ড         এডওয়ার্ড=এডওয়া৒ড্
ওঅর-বন্ড        ওয়ার-বন্ড/ওয়র-বন্ড=ওয়ার-বন্ড্/ওয়র-বন্ড্
দইঅলা          দইওয়ালা/দইওলা=দইওয়ালা=দইওলা


ব-১৮.২.৮(২)৤ শব্দমধ্যে মুক্ত  হবে না৤ যেমন -- (কাল্পনিক উদাহরণ সহ)
   হবে না                  হবে
(war)ওআর       ওয়ার=ওয়ার৤ (ওয়াড়-- বালীশ৙র ওয়াড়, আলাদা শব্দ)
ওআলা             ওয়ালা=ওয়ালা
ওআড়              ওয়াড়=ওয়াড়(বালীশ৙র)
দইওআলা          দইওয়ালা=দইওয়ালা
          .......     .......
          * কাল্পনিক *
দেওআ  =        দ৙঄ওয়া
ফোআরা =        ফৗয়ারা
মায়আ   =        মায়া
রেওআজ=        র৙ওয়াজ/র৙঄ওয়াজ
লওআ   =        লওয়া
লাগোআ =       লাগৗয়া
শোআ   =        শৗয়া

বাংলা নতুন-বানান -৩২

ব-১৮.২.৮(৩)-কে ভিত্তি করে সব স্বরধ্বনি এবং চিহ্ন প্রকাশ করা চলবে না৤ যেমন--
       অি   অী   অু   অূ   অৃ   অে/অ৙   অ্যা/অ৙঄   অৈ   অো   অৌ/অৗ

          অবশ্য এই ধরণের ব্যবহার বাংলায় নেই৤ প্রচলনের প্রয়োজনও নেই৤

 হবে না          হবে
অিলিশ          ইলীশ
অুচিত           উচীত
অেড়িয়ে        এড়ীয়৙
অ্যাখন/এ্যাখন =এাখন
অৈহিক         ওইহীক
অোষুধ          ওশুধ
অৌষধ          ওউশধ-- ওশুধ৤  
                              


ব-১৮.২.৯৤ “কি”  -- অব্যয়, এবং সর্বনাম হিসেবে ব্যবহার 
কি অব্যয়
          তুমি কি খাবে(will you eat)? তুমি কি, খাবে?
          = তুমী কী, খাব৙? (তুমী খাব৙ কীনা?) --  প্রশ্ন খাবে কিনা তা নিয়ে৤
          (এখানে  খাব৙ কথাটির উপরে জোর দেওয়া হয়েছে৤ এর উত্তর হবে হ্যাঁ, বা না৤)
          যেখানে প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না হবে সেটা অব্যয়৤

কী সর্বনাম (নাম, বা বীশ৙শ্শ৙র বদল৙ বশ৙)
          তুমি কী খাবে(what will you eat)? তুমি, কি খাবে?
          =তুমী, কী খাব৙? (তুমী কৗন্ জীনীশ খাব৙?)  --  প্রশ্ন কোন্ জিনিস খাবে তা নিয়ে৤
          (এখানে কী কথাটির উপরে জোর দেওয়া হয়েছে৤ খাব৙ কথাটির উপরে জোর নেই৤ 
          এর জবাবে কোনও একটা জিনিসের নাম বলতে হবে৤)


বাংলা নতুন-বানান -৩৩

ব-১৮.৩বাংলায় অ/ও, অর্ধ-ও ব্যবহার -- 
          কথ্য বা মুখের ভাষায় অ/ও, অর্ধ-ও উচ্চারণ এবং তৎকারণে ইচ্ছে মতো ও-কার দিয়ে শব্দ লেখা, বা না-লেখা বর্তমান বাংলা বানানে এক অতি জটিল অবস্থার সৃষ্টি করেছে৤ এজন্য বাংলা বানানের বিশৃঙ্খলা অনেকখানি বেড়ে গেছে৤ দ্রুত লেখার সময়ে তো নয়ই, অন্য সময়েও আলাপ আলোচনা করেও প্রায়ই ঠিক করা কঠিন হচ্ছে যে, কোথায় ‘অ’ এবং কোথায় ‘ও’-কার হবে৤ যেমন শব্দ শেষের -ধ্বনি বর্তমানে অর্ধ-ও হবার দিকে ক্রমে ঝুঁকে পড়ায় বানানে প্রচুর ও-কার (বাংলায় অর্ধ-ও কারের চিহ্ন না থাকায়, সেসব স্থানে পূর্ণ ও-কার) চিহ্ন ব্যবহার করা হচ্ছে৤
          সমস্যা বাড়ুক বা কমুক, অনেকে আবার যথাসম্ভব ও-কার বর্জন করে চলেছেন৤ তার মানে অবশ্য এই নয় যে, ও-কার দেওয়া হবে কিনা তা টস্ করে ঠিক করতে হবে, অথবা প্রথমটা ও-কার দিলে পরেরটা আর ও-কার হবে না, এমনি একটা সমঝোতার নীতি নিতে হবে! বরং ও-কার ব্যবহারের  সঠিক প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে নিশ্চিত মনে কোথায় ও-কার হবে, অথবা কোথায় হবে না, তা ঠিক করতে হবে৤
          অ/ও, অর্ধ-ও ব্যবহার কীরকম হওয়া উচিত এ নিয়ে নানা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে৤ উদ্দেশ্যটা এই যে, ও-কার যেন যথেচ্ছ ব্যবহার করা না হয়, এবং যেন ও-কার হাতড়ে হাতড়েই ব্যবহার করতে না হয়৤ যদিও এখন অনেকটা তাই-ই করতে হচ্ছে৤
          বাংলাভাষা এক বিরাট পরিবর্তনের-পর্বের মধ্য দিয়ে চলেছে৤ অবশ্য সব ভাষাই সকল সময়ে পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলে৤ যদিও কখনও তা খুব চোখে পড়ার মতো, কখনও তা তেমন চোখে পড়ে না৤ এই অবস্থায় ও-কার ব্যবহারের সকল ক্ষেত্রগুলিকে খুব নিশ্চিত হয়ে চিহ্নিত করা যাবে না, বা কোথায় ও-কার হবে, তা নির্দ্বিধায় বলা যাবে না৤ যে-কোনও দুজন সাধারণ ব্যক্তি, কিংবা বিশেষজ্ঞ বহুক্ষেত্রেই ও-কার ব্যবহার সম্পর্কে একমত হবেন না৤
          দুধ থেকে যখন দই হয়, তখন দুধ থেকে অতি ধীরে দই হবার জন্য পাত্রে দুধ রাখতে হয়৤ দুধ ক্রমে ঘন হয়ে শেষে দই হয়৤ দুধ থেকে দই হবার এই প্রক্রিয়ার সময়, যে মধ্যবর্তী স্তর, অর্থাৎ তা, না দ-- না দু, এই স্তরকে ধরি বলা হল, “”৤ তবে অ এবং ও-এর মধ্যবর্তী স্তর-- অর্ধ-ও হল, এই ‘ইধ’ স্তর৤

          নিয়ত পরিবর্তনের ধারার মধ্য দিয়ে চলার ফলেই-- অ/ও, অর্ধ-ও পরিবর্তন ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে৤ আলোচনার মধ্যমে এ সম্পর্কে একটা নির্দিষ্ট নিয়মে আসার চেষ্টা করা দরকার৤
          রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্বাভাবিক দক্ষতার সঙ্গে অ-এর ও-কার হবার এই ঝোঁক নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁর শব্দতত্ত্ব বইয়ে(বাংলা উচ্চারণ, পৃঃ ১৮ - ২০, এবং স্বরবর্ণ অ, পৃঃ- ২১ - ২২)৤


ব-১৮.৩.১৤ ‘অ’ কেন ‘ও’ হয়? 
          বাংলা অ-ধ্বনি স্বভাবতই একটু বর্তুল৤ অ-ধ্বনির অবস্থান চিত্র(চিত্র-১ এবং ২) দেখলে ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে৤ অ-ধ্বনিকে পরিবেশের প্রভাবে সহজেই “ও”-ধ্বনি হিসেবেও উচ্চারণ করা যায়৤ কারণ, অ এবং ও-উচ্চারণ করার কালে জিভের অবস্থান উপর-নিচে পাশাপাশি তল-এ থাকে (উল্লম্ব তল Vertical Plane, তথা নিম্ন তল ও মধ্যোচ্চ তল-- এই দুটি তল-এ), এবং জিভ একটি অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে যেতে পারে অতি অনায়াসে৤ চিত্র-২ থেকে দেখা যাবে যে, ত্রিভুজ “অইও” একটি বিষমবাহু ত্রিভুজ৤ এখানে বাহু ‘ইঅ’ অপেক্ষা বাহু ‘ইও’ ছোটো৤ “ইঅ”-বৃত্তচাপ “ও”-কে ছেদ করেনি, বরং অনেকটা ছোটো৤
          অর্থাৎ ‘ইও’ বাহু ‘ইঅ’ বাহু থেকে ছোটো৤ সুতরাং অ-অবস্থান, বা উচ্চারণ থেকে ই-উচ্চারণে যাওয়ার চেয়ে “ও”-অবস্থান বা উচ্চারণ থেকে “ই”-অবস্থান বা উচ্চারণে যেতে সময় এবং পরিশ্রম কম লাগে৤ অর্থাৎ ‘অই’ অপেক্ষা ‘ওই’ বেশি অনায়াস৤ তাছাড়া, ‘ই’-এর তল এবং ‘ও’-এর তল পাশাপাশি, কিন্তু অ-এর তল উভয়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিচে৤ তাই ‘ও’-উচ্চারণ থেকে ‘ই’-উচ্চারণে যেতে সময় এবং পরিশ্রম লাগে বেশি, “অ” উচ্চারণ থেকে “ই” উচ্চারণে যাওয়া তুলনামূলকভাবে বেশি কঠিন, অর্থাৎ বেশি সময় আর পরিশ্রম-সাপেক্ষ ব্যাপার৤  সেজন্য “অতি” উচ্চারণ সহজে “ওতি” হয়ে যায়৤ অত্-ই অপেক্ষা ওত্-ই উচ্চারণ সহজতর৤ 

চিত্র-১

                             এখানে, পরবর্তী স্বরধ্বনি ই-এর প্রভাবে, পূর্ববর্তী স্বরধ্বনি অ-এর পরিবর্তন হয়েছে৤ মধ্য-নিম্ন স্বরধ্বনি অ-হয়েছে মধ্যোচ্চ স্বরধ্বনি “ও”৤ এটি হল পরাগত(Regressive)পরিবর্তন, তথা পরবর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে, পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন৤ তুলনামূলকভাবে যেমন-- “ওই” বলার চেয়ে “এই” বলা সহজ৤ চিত্র-১ এবং ২ দেখলে উক্ত বিষয়টি স্পষ্ট হবে৤ 


বাংলা নতুন-বানান -৩৪

বাংলা স্বরধ্বনির সামীপ্য প্রকরণ



চিত্র-১



                   
                                                          চিত্র-১    



বাংলা নতুন-বানান -৩৫

  
(উপরের “বাংলা স্বরধ্বনির সামীপ্য প্রকরণ” -- এই অংশটুকু ডঃ পবিত্র সরকারের অভিমতের 
আলোকে সূত্রায়িত৤ )

উপরে  চিত্র-১ 
এই পরিবর্তনের সকল উদাহরণগুলি একত্র করলে সকল বহির্মুখী এবং অন্তর্মুখী পরিবর্তনের অভিমুখগুলি স্পষ্ট হবে৤ সে আলোচনা পৃথকভাবে করা দরকার৤


নিচে চিত্র-২


বাংলা নতুন-বানান -৩৬

        “এ”-ধ্বনিটি হল প্রসৃত সম্মুখ-ধ্বনি৤ জিভ সম্মুখে অবস্থান করবে, এবং মধ্যোচ্চ হবে; 
ঠোঁট হবে প্রসৃত এবং অর্ধ-সংবৃত৤ “ই”-ধ্বনিটিও প্রসৃত সম্মুখ ধ্বনি৤ জিভ সম্মুখে এবং উচ্চে অবস্থান করবে; ঠোঁট হবে প্রসৃত এবং সংবৃত৤ ‘ই’ এবং ‘এ’(উল্লম্ব তলে -- উচ্চ এবং মধ্যোচ্চ) পাশাপাশি অবস্থানের ধ্বনি হওয়ায়-- “এই” উচ্চারণ করা সহজ৤
উল্লম্ব তলের পাশাপাশি স্বরধ্বনি হল-- উ ও অ আ এা এ ই (পশ্চাৎ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হলে)
(এটিই হবে স্বরধ্বনির উচ্চারণ-স্থানের ক্রম)৤

আনুভূমিক তলের পাশাপাশি স্বরধ্বনি হল -- উ ই ও এ অ এা আ (উচ্চ, মধ্যোচ্চ, মধ্য-নিম্ন, নিম্ন এভাবে আনুভূমিক তলের Horizontal plane ক্রম অনুসারে)

          কিন্তু, ও-ধ্বনি হল বর্তুল পশ্চাৎ ধ্বনি৤ ও-উচ্চারণ করতে জিভ পশ্চাতে মধ্যোচ্চ অবস্থানে থাকে; ঠোঁট বর্তুল অর্ধ-সংবৃত ‌অবস্থায় থাকে, তাছাড়া, ও-ধ্বনি এবং ই-ধ্বনি উল্লম্বভাবে(খাড়াই তল) পাশাপাশি অবস্থানের ধ্বনি নয়, (যদিও ‘এ’ এবং ‘ও’ আনুভূমিকভাবে  পাশাপাশি[একই মধ্যোচ্চ] তলে অবস্থিত)-- এসকল কারণে “ওই” উচ্চারণ করার চেয়ে ‘এই’ উচ্চারণ করা সহজতর৤ “ওই” উচ্চারণ করতে গেলে জিভকে অনেক বেশি নড়াচড়া করতে হয়, “এই” বলার কালে জিভকে খুব কম নড়তে হয়৤ ‘ও’ এবং ‘ই’ আনুভূমিক পাশাপাশি তলে হলেও জিভের সামনে-পিছনে চলাচলে যাতায়াতে  সময় এবং শ্রম বেশি লাগে৤
          সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে জিভের গমনপথ, এবং দূরত্ব, আর ঠোঁটের আকৃতি পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে সময় ও শ্রম যেখানে কম-- উচ্চারণের ঝোঁক সেদিকে সহজে ধাবিত হয়৤ সময় এবং শ্রম লাঘবের স্বাভাবিক মানবিক প্রকৃতি অনুসারেই এটা প্রায় অনায়াসে ঘটে থাকে৤ এইভাবে পরিবেশ জনিত কারণে বাংলায় “অ” সহজেই “ও” হয়ে যায়৤ অতি=ওতি, গতি=গোতি, অনিল=ওনিল ইত্যাদি৤ এইজন্য অ-এর পরে ই/ঈ, উ/ঊ বা এদের স্বরচিহ্নগুলি(-কার চিহ্ন) থাকলে, অর্থাৎ (জিভ উচ্চে এবং ঠোঁট সংবৃত অবস্থার) এই ধ্বনিগুলি থাকলে অ=ও হয়ে যায়৤


ব-১৮.৩.২৤ অ-ধ্বনি বা ও-ধ্বনি যেখানে খুব স্পষ্ট সেখানে সমস্যা কম৤ সেখানে ‘অ’ কিংবা ‘ও’ নির্দেশ করলে কাজ মেটে৤ কিন্তু যেখানে ‘অ-ও’ পার্থক্য অস্পষ্ট অর্থাৎ ইচ্ছে মতো ‘অ’ কিংবা ‘ও’ বলা যায়, সে সকল ক্ষেত্রে এই সমস্যা এক বিরাট মুখ-ব্যাদান করে আছে৤ কারণ এধরনের শব্দ বাংলায় অগণিত৤ আর সবচেয়ে সমস্যা হল, এসব তর্কের তো কোনও নিশ্চিত মীমাংসা নেই৤ ‘গঠন দখল নায়ক’ এই শব্দগুলিকে কেউ যদি গঠোন, দখোল, নায়োক বলেন তবে বাধা কিছু নেই, কারণ এগুলি এমনিভাবেই বলা বা উচ্চারণ করা হয়৤  ‘গঠন দখল নায়ক’ বলার রেওয়াজই বরং কম, বা কমতির দিকে৤ গ্রামে  দেখা যায় অ-এর দিকে ঝোঁক বেশি, এবং শহরে[যেখানে আবার শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেশি] ও-এর দিকে ঝোঁক বেশি৤ এই শব্দগুলিকে ও-কার দিয়ে লেখায়ও বাধা দেওয়া যায় না৤ কিন্তু এখানকার সকল ‘ও’ আসলে ‘অর্ধ-ও’৤ তাই, ও-কার দিয়ে লিখেও ঠিক স্বস্তি নেই৤ ও-কার না-দিয়ে লিখলে (অর্থাৎ ও-কার ছাড়া লিখলে) ভুল বলা যাবে না, বরং ঠিকই লেখা হয়েছে বলতে হবে৤ এই ধরনের ‘অ/ও’ তথা ‘অর্ধ-ও’ সমস্যাটি মূল ও-কার সমস্যার চেয়ে অনেক বেশি জটিল৤ যে-সকল ক্ষেত্রে এরকম অর্ধ-ও সমস্যা আছে সেখানে ও-কার না লেখাই ভালো৤ কারণ বাংলায় অ-এর একটুখানি বর্তুল বা ও-কার ঘেঁষা উচ্চারণ লক্ষ করা যায়(‘অ’ ‘ও’ দুটি ধ্বনিই পশ্চাৎ বর্তুল ধ্বনি, পাশাপাশি [মধ্যোচ্চ, মধ্য-নিম্ন] তলের ধ্বনি), আর এই প্রকৃতিটির জন্য বাংলায় অ/ও সমস্যা এক প্রকট আধুনিক সমস্যা৤ তবে এ সমস্যাকে না মিটিয়ে পাশ কাটানো বৃথা৤ প্রাচীন বানানরীতি ক্রমশ ভাঙছে, এবং দ্রুত ভাঙবে-- সমস্যা সমাধানের চিন্তা সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করাই সঠিক হবে৤
          যেখানে স্বাভাবিক ‘ও’-উচ্চারণ হচ্ছে সেখানে বানানে ‘অ’ অথবা অ-কার[৹] রেখে না দিয়ে ‘ও’ এবং ও-কার [ো ] লেখাই ভালো৤ এব্যাপারে সংকোচ করে বা বিরোধিতা করে রক্ষণশীলতা দেখিয়ে এই বানানকে আটকানো যাবে না৤ যুগ এবং জীবনের গতিকে বেশি কাল ধরে আটকে রাখা যায় না৤ বরং এইসব পরিবর্তনকে নিজেদের সুবিধাজনক-উপায় এবং পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে পারলে লাভ বেশি৤ বিরোধিতা করে পরিবর্তনের গতিপথ থেকে সরে থাকলেও এ পরিবর্তন হবেই-- তবে তা হবে অতি অনিয়ন্ত্রিত পথে, যা আমাদের অসুবিধাকেই আরও বেশি বিস্তৃত করবে মাত্র, এবং যা থেকে আমরা যথাযথ সুবিধা কখনওই আদায় করে নিতে পারব না৤ 

বাংলা নতুন-বানান -৩৭

ব-১৮.৩.৩৤ স্বরধ্বনির উচ্চতাসাম্য, তথা স্বরসঙ্গতি(Vowel Height Assimilation) লক্ষ করলেও আমরা এমনি উদাহরণ দেখতে পাব, যেখানে অ-ধ্বনি ‘ও’ হয়ে যাচ্ছে৤ যেমন--

অমল=অমোল=অমৗল
অমিয়=ওমিয়=ওমিও [য়=অ]=ওমীও  
গুজব=গুজোব=গুজৗব
বাদল=বাদোল=বাদৗল

দৈবজ্ঞ=দৈবোজ্ঞ(দোইবোগ্যোঁ)=দৗইবৗগ্গৗ৺
নব্য=নোব্য=নৗব্ব
পক্ষ=পোক্ষ=পৗখ্খ

যজ্ঞ=যোজ্ঞ(জোগ্যোঁ)=জৗগ্গৗ৺   ইত্যাদি৤ 

          স্বরধ্বনির উচ্চতাসাম্য বা স্বরসঙ্গতি জনিত কারণে ধ্বনির যে পরিবর্তন ঘটে, তা উচ্চারণের স্বাভাবিক ঝোঁকবশত হয়৤ আর এর ফলে নানা পরিবেশে এবং সময়ান্তরে বানানে ধীরে ধীরে এর প্রতিফলন ঘটে৤
          একজন ব্যঙ্গলেখক তথা চিত্রকর মজা করে তাঁর নাম-- ‘ওমিও’(omio) বলে লিখেছেন৤ এক্ষেত্রে অন্তত ‘omio ওমিও’ বানানকে ঠেকানো যাবে না৤ যেমন কায়দা করে ‘নিউজ’ ইংরেজিতে লেখা চলছে NEWZ. কোনও শিশু যদি এইসব বানান দেখে প্রভাবিত হয়, এবং পরবর্তী সময়ে তার পক্ষে ‘ওমিও’ বা NEWZ বানান লেখা খুব অসম্ভব ব্যাপার কি? 

          কোথায় ও-কার দেওয়া হবে, এবং কোথায় তা দেওয়া হবে না, সে সম্পর্কে এক বিস্তারিত আলোচনা করেছেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ পরেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর “বাঙলা বানানবিধি” (আগস্ট, ১৯৮২) বইখানিতে৤ 

          বেশ কিছুকাল আগে স্থাপিত(১৯৭৯) এবং পরে স্থগিত হওয়া কোলকাতা  বিশ্ববিদ্যালয়ের “বাংলা বানানের নিয়ম সমিতি”  তাঁদের প্রয়াসে বাংলা বানানের একটি খসড়া “বাংলা বানানের নিয়ম” (সভাপতি, অধ্যাপক ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধায়) তালিকায় ‘অ/ও’ সম্পর্কে বেশ কিছু বিধি তৈরি করেছিলেন৤ 

          ডঃ জগন্নাথ চক্রবর্তী কর্তৃক পৃষ্ঠপোষিত “সাংস্কৃতিক খবর” মাসিকপত্রে (ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩) “নতুন বাংলা বানান” নিবন্ধে ‘অ/ও’ নিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় সূত্র আছে৤ 

          বাংলা ভাষা এবং বানান এত দ্রুত পরিবর্তনশীল যে, ‘অ/ও, অর্ধ-ও’ জনিত পরিবর্তন বা বানান সম্পর্কে এই মুহূর্তে কোনও স্থির সিদ্ধান্তে আসা কঠিন৤ তার কারণ ‘অ/ও, অর্ধ-ও’ জনিত পরিবর্তন বা বানান এখনও কোনও একটা নির্দিষ্ট অবয়বে পৌঁছায়নি৤ পৌঁছানোর সম্ভাবনাও বহু দূরে৤ তাছাড়া, অ এবং ও-এর মধ্যবর্তী ধ্বনি ‘অর্ধ-ও’ লেখার কোনও আলাদা লিপিও নেই(যেমন নেই অ-এর কোনও স্বরচিহ্ন, যদিও “অ” লিপিটি এবং উচ্চারণটি বাংলায় চালু আছে )৤ তা থাকলে এক্ষেত্রে খানিকটা সুবিধা হত৤ যাহোক, এখানে লেখক বা পাঠকদের স্বাধীনতা কিছুটা স্বীকার করে নেওয়াই ভালো৤ 


পরবর্তীকালে লেখক ও পাঠকদের-- লেখা এবং পাঠরীতি একটি নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত হলে, তখন ‘অ/ও, অর্ধ-ও’ পরিবর্তন বা বানান সম্পর্কে স্পষ্ট বিধি তৈরি করা সম্ভব হবে৤ চলিত-বাংলার বানানের কোনও পূর্বের-স্থিরীকৃত বানান-রীতি না-থাকার জন্য, সাধু থেকে কথ্য চলিত-বাংলায় লেখার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে(সবুজপত্র প্রকাশের সময় থেকে-- বৈশাখ, ১৩২১, এপ্রিল, ১৯১৪)  বানানেও অনেক অতিরিক্ত বিভ্রাট এসে জুটেছে৤ যদিও সবুজপত্রে কথ্য চলিত-বাংলায় লেখার সূচনা বাংলা ভাষায় এক যুগান্তকারী সাধু উদ্যোগ৤


          কিন্তু তবু একেবারে অনিয়মের হাতে সব ব্যাপারটা ছেড়ে দিলে-- ভাষা ও বানানে বিশৃঙ্খলা বাড়বে ছাড়া কমবে না৤ [হুতোম প্যাঁচার নকশায় এককালে যেমন লেখা হয়েছে--“চার দিকে ছোড়িয়ে পড়লেন” ১৮৬১খ্রিস্টাব্দ] তাই, এ ব্যাপারে কিছু সামঞ্জস্য আনার জন্য কতকগুলি সাধারণ সূত্র মেনে চলা দরকার, যেগুলি ভবিষ্যতে আরও আঁটোসাঁটো হয়ে উঠতে পারবে, এবং এই ক্ষেত্রের বিশৃঙ্খলা দূর করতে সাহায্য করবে৤ বর্তমানে বাংলা বানানের সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ক্ষেত্র এটি, সুতরাং এটি সম্পর্কে স্থিরনিশ্চিত হতে পারলে ভাষার অগ্রগতিতে অনেক সহায়তা হবে৤


বাংলা নতুন-বানান -৩৮

          উপরে উল্লিখিত আলোচনাসূত্রগুলির সহায়তা নিয়ে এবং অন্যান্য পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত সূত্রগুলিকে নিচে তালিকায়িত করা হল--

ব-১৮.৩.৪৤ ক্রিয়ার অনুজ্ঞায় বর্তমানকালে পদান্তে ও-কার (ো) হবে৤
          যেমন-- আনো, করো, খেয়ো, গেয়ো, চেয়ো, ধরো, পেয়ো, বলো, যেয়ো, শুয়ো৤

ব-১৮.৩.৫৤ ক্রিয়ার অনুজ্ঞায় ভবিষ্যৎ কালে পদান্তে এবং আদিতে ও-কার হবে৤
          যেমন-- কোরো, চোড়ো, পোড়ো, বোলো, বোসো, লোড়ো, হোয়ও[হোয়ো থেকে]

ব-১৮.৩.৬ক্রিয়ার ণিজন্ত রূপ (প্রেরণার্থক ক্রিয়ায়) ও-কারান্ত (-আনো) হবে৤
          যেমন--আনানো, করানো, খসানো, গড়ানো, গছানো, ঘটানো, চাবকানো, ছিটানো, জড়ানো,    
          ঝিমানো, ঠাকনো, নড়ানো, পাকানো, বাঁকানো, লুকানো, হাতানো হাঁটানো৤

ব-১৮.৩.৭৤ সম্পন্ন অসমাপিকা ক্রিয়াতে ও-কার হবে৤
         

যেমন-- করে কোরে= সে গান করে-- সে গান (করে) কোরে মাতাবে৤

খসেখোসে=কত টাকা খসে কে জানে-- টেবিলটা বানাতে অনেক টাকা খোসে গেছে৤

চড়ে চোড়ে= রাম ঘোড়া চড়ে-- রাম ঘোড়া (চড়) চোড়ে বেড়াতে যায়৤ ধরে ধোরে=বাটিতে এক লিটার দুধ ধরে, কিন্তু-- আম গাছে মুকুল (ধরে) ধোরে কবে যে গেছে ঝোরে৤ বসে বোসে=সবাই টেবিলে খেতে বসে না, কিন্তু-- তোমার আশায় মোটেই(বসে) বোসে থকব না৤
          অর্থাৎ করে কোরে, খসে খোসে, চড়ে চোড়ে, ঝরেঝোরে, ধরে ধোরে, নড়ে নোড়ে, বলে বোলে, বসে বোসে, সরে সোরে  ইত্যাদি


ব-১৮.৩.৮৤ প্রেরণার্থক ক্রিয়াপদ বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হলেও ও-কারান্ত হবে৤
          যেমন-- ধোমকে করানো কাজ, গোপনে ঘটানো ব্যাপার, তার কষ্টে জমানো টাকা, লোক হাসানো ব্যাপার,  ইত্যাদি৤

ব-১৮.৩.৯৤যেসব ক্ষেত্রে অর্থ-ভ্রান্তি দেখা দিতে পারে, সেখানে হ-ধাতুর কয়েকটি রূপে আদিতে ও-কার হবে৤ উচ্চারণ-ভ্রান্তির সম্ভাবনাও আছে কোথাও কোথাও [হল=(hall নহে) হল৹= হোলো]৤
যেমন-- হক=হোক (হক/হক্ সাহেব), হত(নিহত অর্থ নয়)=হোতো, কিন্তু সব সময়ে হন হোন করার দরকার নেই৤ তিনি আমার মামা হন৤ তিনি সভাপতি হোন[হউন], হল হোলো[হোল hole =হোল্ (এখানে হস্ চিহ্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক)], হস=হোস্৤



ব-১৮.৩.১০৤যেসকল ক্ষেত্রে শব্দের অর্থের ভিন্নতা এবং/বা অর্থবোধে বিঘ্ন ঘটতে পারে সেসকল ক্ষেত্রে, এবং কিছু ক্রিয়া-রূপে ও-কার হবে৤ একারণে দু-রকম বানান চলবে না৤ যেমন-- আঠার আঠারো/আঠেরো (আঠা আঠার মতো লেগে থাকা), কাল(আগামী/গত) কালো, কেন(কোন্ কারণে কেনো(ক্রয় করো), ছোট(ক্ষুদ্র) ছোটা(দৌড়াও)[বর্তমানে দুটি ক্ষেত্রেই বানান ছোটো], তত ততো(সংখ্যা ৩৩ থেকে সহজে পার্থক্য বোঝাতে), ত তো(সংখ্যা ৩ থেকে সহজে পার্থক্য বোঝাতে), পনের ১৫(পণ-এর পণ ‘পণের’ কথাটি থেকে আলাদা করার জন্য পনেরো, বার(দিন) বারো ১২(সংখ্যা), ভাল(কপাল)ভালো, মত(অভিমত মতো(সদৃশ), ষোল[ শোল (একপ্রকার মাছ)]ষোলো ১৬, সতের সতেরো ১৭(তুলনীয়, অসতের কেবল মৃত্যুচিন্তা, ভয় নেই সতের[সৎ-এর]), ইত্যাদি৤ অবশ্য তেত তেতো, নয়ত নয়তো, যত যতো, হয়ত হয়তো, বানান চলতে পারে সমতা বিধানের জন্য৤ ‘ছোট’ অর্থে ক্ষুদ্র বোঝালে হবে “ছোট”, এবং দৌড়াও বোঝালে হবে “ছোটো”, কিন্তু বর্তমানে দুটি ক্ষেত্রেই বানান “ছোটো”৤ বৃহৎ বোঝাতে হবে বড়(বড়ো নহ৙)৤ সর্বত্র যুক্তি প্রাধান্য পাবে, তবে সাযুজ্য বা সঙ্গতি বা সাদৃশ্য রক্ষার গুরুত্বও অবশ্য খুব কম নয়৤

বাংলা নতুন-বানান -৩৯

ব-১৮.৩.১১৤ স্বতঃ ও-কার৤ যেমন-- খোড়ো(খড়ুয়া-- খড় নির্মিত), ঘোরো(ঘুরতে থাকো, [‘ঘর সম্পর্কিত’ অর্থেও চলতে পারে]), জোলো (জলুয়া, জলসা/জলসিক্ত, জলমিশ্রিত, পানসে[পানি সিক্ত]), ঝোড়ো(ঝড়ুয়া, ঝড়যুক্ত), পোড়ো(প্রাচীন, পড়ুয়া/পাঠক), হেরো(যে হেরে গেছে৤ হার মানিয়া লইও/লইয়ো-- এই অর্থেও হতে পারে)৤

ব-১৮.৩.১২(১)৤ পৃথক শব্দ বোঝাতে ‘ও’ ব্যবহার হবে, ও-কার হবে না৤ অন্যত্রও, অতিরিক্ত ইত্যাদি বোঝাতে হলে ‘ও’ হবে, ও-কার হবে না৤ যেমন-- (এগুলো অবশ্য তৈরি করা উদাহরণ)
  হবে না            হবে
ঘরো বাড়ি       ঘর ও বাড়ী
তখনো এখন     তখন ও এাখন
দইয়ো মিষ্টি     দই ও মীশ্টী
নদোনদী          নদ ও নদী
পানোসুপারি      পান ও শুপারী
ভাতোমাছ        ভাত ও মাছ

ব-১৮.৩.১২(২)৤ এ ছাড়া যেমন--
  হবে না                     হবে
অংশো ছিল               অংশও ছীল
আরো বেশি               আরও ব৙শী
এখনো ভাবি না           এাখনও ভাবী না
কখনো হবে না           কখনও হব৙ না
কারো কথা               কারও কথা
কোনো কথা              কৗনও কথা
তখনো হবে             তখনও হব৙
ধারো করে               ধারও কর৙
পারো পাবে              পারও পাব৙
বারো হয়                বারও হয়
যখনো হোক             জখনও হৗক    ইত৙঄দী [দ্রঃ--ব-১৮.২.৩]

          কোন্, কোন/কোন৹, কোন কোন/কোন৹ কোন৹, কোনও/কোনোও -- প্রয়োগ কীভাবে হবে? 

যেমন-- কোন্=কৗন্ বইটা চাই, কৗন্ লৗকটা আমাক৙ চ৙ন৙ না? 

          কৗন/কৗন৹=কৗন/কৗন৹ পৗস্টার বা কৗন/কৗন৹ দ৙঄ওয়াল লীখন ন৙ই৤ (খুব নির্দিষ্ট)

          [কীন্তু অন৙কখানীই অনী৒দীশ্ট বৗঝাত৙= কৗন/কৗন৹ লৗক চ৙ন৙, কৗন/কৗন৹ লৗক চ৙ন৙ না] 
          কোন কোন/কৗন৹ কৗন৹=কৗন কৗন/কৗন৹ কৗন৹ শময়৙ বরফ পড়৙, কৗন কৗন/কৗন৹ কৗন৹ লৗক
          চ৙ন৙৤[খুবই অনী৒দীশ্ট] 
          কোনও/কোনোও=কৗনও/কৗনৗও ওজর আপত্তী নয়, টাকাটা এখুনী চাই৤ বৗঝা গ৙ল 
          কৗনও/কৗনৗও লৗক চ৙ন৙না৤ [খুব জৗর দীয়৙] 

এখানে একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে,
‘কোন্’ শব্দটি খুব নির্দিষ্ট which অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে৤
কৗন/কৗন৹ শব্দটি সাধারণভাবে অনিশ্চিত any (বা some) অর্থে,
কৗন কৗন/কৗন৹ কৗন৹ শব্দটি অনিশ্চিত some অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে৤ এবং
কৗনও/কৗনৗও শব্দটি খুব জোর দিয়ে (no any বা none অর্থে) ব্যবহার করা হয়েছে৤


বাংলা নতুন-বানান -৪০

ব-১৮.৩.১৩৤ অধিকন্তু বোঝাতে ‘ও’ বাবহার প্রচলিত থাকবে৤ যেমন-- (কল্পিত উদাহরণ)
 হবে না           হবে
আমিয়ো          আমীও
তবুয়ো            তবুও
তুমিয়ো           তুমীও
যদিয়ো           জদীও
সেয়ো            শ৙ওশ৙-ও



ব-১৮.৩.১৩ নিচের ক্ষেত্রগুলিতে ‘ও’ ব্যবহার হবে না৤ 
          যেমন-- ‘পাঠিয়ো/পাঠীয়ৗ’ স্থানে পাঠীও হবে না৤ তাহলে, পাঠিয়ে/পাঠীয়৙ লিখতে ‘পাঠিএ’ লেখা দরকার, যা বানানে অসমতা প্রকাশ করবে৤ এই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, অর্থাৎ পাঠিও, পাঠিএ লিখলে শব্দমধ্যে অযথা মুক্ত স্বরবর্ণ  ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে গিয়ে জটিলতা বাড়াবে৤ তখন ‘দইওয়ালা’ হবে ‘দইওআলা’, যদিও  বিশেষ এই শব্দটি হয়তো চলতেও পারে(রবীন্দ্রনাথ শব্দটি এইভাবেই ব্যবহার করেছেন৤[ডাকঘর])৤ কিন্তু তাহলে ‘ঔষধ’ হতে পারে “অৌষধ”, ‘কয়েক’ হতে পারে “কঅেক” ইত্যাদি৤ এভাবে না লেখাই ভালো৤ বরং য়-বর্ণটির নানা ধ্বনি বৈশিষ্ট্যের তালিকা থেকে neutral বা নিরপেক্ষ-ধ্বনি অংশটির বিশিষ্ট প্রয়োগ দ্বারা শব্দমধ্যে মুক্ত-অ ব্যবহার না করেও পারা যাবে৤ 

শব্দমধ্যে মুক্ত-অ ব্যবহার চালু নেই, চালু করার দরকারও নেই৤
হবে না               হবে
করিও                করীয়ৗ
খেও                  খ৙য়ৗ
চেও                  চ৙য়ৗ
দিও                  দীয়ৗ
নিও                  নীয়ৗ
পাঠিও              পাঠীয়ৗ
প্রিও/প্রিঅ(প্রিয়)   প্‍রীয়/প্‍রীয়ৗ
যেও                 জ৙য়ৗ

          কিন্তু নিচে প্রদর্শিত ক্ষেত্রে বানানগুলি কেমন করে লেখা হবে, তা চিন্তার বিষয়--
দুয়ো       দুও(ধিক) ব্যাটা৤(অন্যত্র যেমন--দুধ দু’য়ো৤ দুইয়ৗ থ৙ক৙ দু’য়ৗ)
সুয়ো      সুওরানি=শুওরানী(অন্যত্র যেমন-- চিৎ হয়ে শু’য়ো৤ শুইয়ৗ থ৙ক৙ শু’য়ৗ)
           ইত্যাদি

        তাই দুয়ৗ(ধিক অর্থে), দু’য়ৗ/দুইয়ৗ(দোহন অর্থে), শুয়ৗ(প্রিয় অর্থে)[শুয়৚রানী], শু’য়ৗ/শুইয়ৗ(শয়ন অর্থে) ব্যবহার করা যেতে পারে৤
          প্রসঙ্গত, রেডিও না লিখে ‘রেডিয়ো/র৙ডীয়ৗ’ লেখা বোধহয় ভালো হবে৤ ভিডিও=ভিডিয়ো =ভীডীয়ৗ, অডিও=অডিয়ো=অডীয়ৗ৤


ব-১৮.৩.১৫৤ জেলার স্থানীয় বা আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় বানানে ব্যতিক্রম হবেই(এমনকী কোলকাতা জেলার স্থানীয় ভাষাতেও), সেজন্য ভিন্ন বানান সেক্ষেত্রে চলতে পারে৤ তবে সেটা কখনওই স্ট্যান্ডার্ড তথা প্রমিত বা মান্য নয়৤ যেমন-- কচ্চে, কত্তে(করতে), কল্‌কেতা, খেপেচে, গাম্‌চা, গেরোস্থো, ট্যাক্‌সো, ট্যাস্‌কি(=ট্যাক্সি), এক পহা(পয়সা), পাত্তো(পারত), পেচোনে(পিছনে), পেতোল, বন্দ(বন্ধ), বাঁদা(বাঁধা), বাস্‌কো, বোশেখ, রুই(=উই), শেকোড়, হয়েচে -- ইত্যাদি৤


বাংলা নতুন-বানান -৪১

ব-১৮.৩.১৬৤ অ-ধ্বনি বোঝাতে লুপ্তি-কমা বা ঊর্ধ্বকমা-চিহ্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে৤
          যেমন-- কয়টা=ক’টাক-টা
                   নয়টা=ন’টান-টা
                   নয়া মাসি=ন’মাশী=ন-মাশী
                   যে কয়টা=য’টা(জ’টা)য-টা(জ-টা) [শন্নাশীর জটা আলাদা
                                                           জীনীশ]
                   ল পাশ(law)=ল’ পাশল-পাশ 
                   শ টাকা(শত)=শ’ টাকাশ-টাকা

          একটি শব্দ তালিকা যদি তৈরি করা যায় তবে, কোন্ শব্দের কী বানান হবে, সাদৃশ্যযুক্ত শব্দসমূহের বানান কী হবে, কেনই-বা হবে স-সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে৤

          এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো যে, বাংলায় অ/ও ব্যবহার যতখানি স্পষ্ট, অর্ধ-ও ব্যবহার ততোখানি স্পষ্ট নয়, ফলে অ/ও ব্যবহার চিহ্নিত করা যদিওবা যায়, অর্ধ-ও চিহ্নিত করা খুবই কঠিন৤ সেজন্য প্রধানত অ/ও ব্যবহার যে-সকল ক্ষেত্রে বেশ স্পষ্ট সে-সকল ক্ষেত্রগুলি শব্দতালিকায় দেখানো যেতে পারে৤
          ধরে ধরে পড়লে অনেক ক্ষেত্রে অ-এর উচ্চারণ “ও” না হয়ে ‘অ’ হবে৤ অনেক সময়ে শব্দের বানান প্রায় একইরকম হলেও পূর্বস্থ বা পরবর্তী ধ্বনি/ধ্বনিগুলির কারণে অ-উচ্চারণ ‘ও’ নাও হতে পারে৤ যেমন-- অশ্রু=ওশ্রু(ওস্‍রু), কিন্তু অশ্রুত=অস্‍রুত৤ অসুর=ওসুর(ওশুর), কিন্তু অসুস্থ=অসুস্থ (অশুস্থ)৤ আবার অমূল্য=ওমুল্য(ওমুল্ল), কিন্তু অমূলক=অমুলক৤ এগুলি আসলে অ-শ্রুত, অ-সুস্থ, অ-মূলক, অর্থাৎ যেগুলি নঞ্ বোধক সেগুলিতে অ-ধ্বনি হচ্ছে, ও-ধ্বনি হচ্ছ না, সেখানে ‘অ’-এর উপরে জোর দেওয়া হয় বলে এটা ঘটে৤  
          অরুচি=অ/ও, অসীম=অ/ও, অসুখ=অ/ও, অপূর্ব=অ/ও, অসুস্থ=অ/ও৤ এখানে নঞর্থক ভাবটির উপর খুব জোর দিলে ‘অ’, এবং কম জোর দিলে ‘ও’ উচ্চারণ হয়৤ 
          বাংলায় বহু শব্দেই অর্ধ-ও, এবং বলা চলে প্রায়-অর্ধ-ও তথা সিকি-ও উচ্চারণও আছে৤ যেমন-- গায়ক, গারদ, কেমন, গঠন, দখল, ওজন ইত্যাদি৤ অর্থাৎ বাংলা শব্দে “ও”-উচ্চারণ-আভাস পদে পদে, সেগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন হতেই হয়, কারণ তারা মোটেই কম সমস্যা নয়৤ 
          যেখানে স্বরান্ত উচ্চারণ হয় সেখানে সাধারণভাবে অর্ধ-ও ধ্বনির প্রকাশ ঘটে (কারণ বাংলা অ-ধ্বনি একটুখানি বর্তুল বা ও-ঘেঁষা)৤ বাংলা বলার “মান্য” তথা প্রমিত অর্থাৎ কোলকাতার রীতিতে
অ-এর ‘ও’ হবার ঝোঁক স্পষ্ট, অর্থাৎ গ্রামে “অ” এবং শহরে “ও” হবার দিকে ঝোঁক বেশি৤ 
          শব্দের শেষে ত, এবং হ স্বরান্ত হয়, অর্থাৎ ‘অ’ অথবা ‘ও’ উচ্চারণ হয়৤ অত(অত৹)/অতো, এত, কত, তত, নত, যত, রত, শত, হত-- কিন্তু ত-এর পূর্বে অ-ধ্বনি না-থাকলে তেমন হবে না৤ আঁত, তাঁত, দাঁত, জাত, পাত, ভাত, মাত, রাত, সাত, হাত শব্দগুলিতে ব্যঞ্জনান্ত উচ্চারণ হবে৤ অর্থাৎ এগুলির উচ্চারণ-- আঁৎ৑ তাঁৎ৑ দাঁৎ৑ জাৎ৑ পাৎ৑ ভাৎ৑ মাৎ৑ রাৎ৑ শাৎ৑ হাৎ


ব-১৮.৪য়-ব্যবহার
          বাংলায় সবচেয়ে জটিল ধ্বনি সম্ভবত-- য়৤ এটি একটি অর্ধস্বর৤ এটির নিজস্ব উচ্চারণ তো আছেই, এছাড়া, অ-ধ্বনির বিকল্প হিসেবেও এর ব্যবহার আছে৤ শব্দ মধ্যে যেহেতু অ আ-- এই দুটি কখনও মুক্ত-বর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, তাই য়-বর্ণটিকে আশ্রয় করে তা প্রকাশ করা হয়৤ আর যেহেতু এটি(অর্থাৎ য়) অ-ধ্বনির প্রতিভূ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাই এর সঙ্গে আ-কার,ই-কার, উ-কার ইত্যাদি জুড়ে কয়েকটি (প্রায়) যুগ্মধ্বনিও দ্যোতিত হয়, এবং তখন অ-ধ্বনি কখনও লুপ্ত, কখনওবা প্রকাশিত থাকে৤ যেমন-- আয়, ভয়, আয়া, আয়ু, আয়ে, আয়োগ, হোয়ো=হোয়ও৤ তাছাড়া, য় অনেকটা সংগীতের মীড়-এর মতোও কাজ করে(খাওয়াইয়া/দয়া), অর্থাৎ এক স্বর থেকে অন্য স্বরে গড়িয়ে যাবার উপকরণ হয়ে ওঠে৤ 







   


বাংলা নতুন-বানান -৪২

ব-১৮.৫৤ ব্যঞ্জনান্ত বোঝাতে হস্(্) চিহ্ন ব্যবহার করা হবে৤ কিন্তু হস্ ব্যবহারে যথাসাধ্য সংযম রক্ষা করেও চলতে হবে৤
কর্নফ্লেকস(cornflakes)=ক৒ন্‌ফ্ল৙কস্/ক৒ন্‌ফ্ল৙ক্স্
শার্ঙ্গ=শা৒ঙ্গ৹দ৙ব/শা৒ঙগ৹দ৙ব
উইম্বলডন(Wimbledon  WIMBLEDON)=উইম্ব্‌ল্‌ডন্(উইম্ব্‌ল্ ডন্৤ এর উচ্চারণ-- উইম্ব্ লডন্ নহ৙)

ব-১৮.৬৤ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অ-ধ্বনির চিহ্ন   ব্যবহার করা হবে না৤ নিচের অ-ধ্বনি যোজিত শব্দগুলিতে অনেকে ব্যঞ্জনান্ত(হস্ অন্তক) উচ্চারণ করেন৤ যেমন-- স্ত্রৈণ৹ অমিতাভ৹ ছিল মূঢ়৹, তাই গালের ব্রণ৹ খুঁটত= স্ত্‍রৗইন৹ অমীতাভ৹ ছীল মুঢ়৹, তাই গাল৙র ব্‍রন৹ খুঁটত৤



          ব-১৮.৭৤ পংক্তির শেষে যদি হাইফেন-যুক্ত সমাসবদ্ধ পদ থাকে, এবং হাইফেনের পরবর্তী অংশ যদি একই পংক্তির মধ্যে না আঁটে, তবে হাইফেনের পরবর্তী অংশ পরের পংক্তিতে লিখবার সময়ে শব্দাংশটির আগে একটি হাইফেন দিতে হবে, শব্দটিতে যে সমাসবদ্ধতা আছে একথা বোঝাবার জন্য৤ অন্যত্র এটা দরকার নেই৤ যেমন--

১৤             ......... বইখানির নাম বাংলাভাষা-
-পরিচয়               
২৤                         .......... মানুষের মন-
-চলাচলের হাজার হাজার ....   
৩৤                        ....... ঝুলিটিতে দিন-
-ভিক্ষে যা জুটেছে ......             
অন্যত্র এটা হবে না৤ যেমন --

ক)                      .....  বিশ্বপরিচয় বই-
খানি লিখতে .....   
খ)                             ..... পরে লোকা-
লয়ে যখন ........      
গ)                               .....  এই কথা-
গুলোকে গেঁথে .......


ব-১৯৤ উচ্চারণ-স্থান অনুযায়ী ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বর্ণমালার নতুন সজ্জা৤


ব-১৯.১৤ স্বরবর্ণ-- ৭টি৤
          বাংলায় মোট মৌলিক স্বরবর্ণ-- ৭টি৤ প্রচলিত ছয়টি এবং নতুন একটি, এই মোট ৭টি৤




বাংলা নতুন-বানান -৪৩


স্বরবর্ণ (৭টি) __
 
এা
স্বরবর্ণ চিহ্ন __
 ৹
  া
  ী
  ু
  
  ৙঄
  ৗ
স্বরবর্ণ চিহ্ন যোগ __
 ক৹
 কা
 কী
 কু
 ক৙
 ক৙঄
 কৗ
প্রচলিত __
কা
কি
কু
কে
ক্যা
কো

                    বাংলায় নতুন স্বরবর্ণ -- এা, অ-এর নতুন প্রবর্তিত স্বরচিহ্ন =



বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনি



        এা   



(দ্রষ্টব্য -- আজকাল, ৪ ডিসেম্বর ১৯৮৪)



বাংলা নতুন-বানান -৪৪


                                    বাংলা স্বরধ্বনি

               জিভ-গতি ↓     সম্মুখ        কেন্দ্রীয়      পশ্চাৎ
                    উচ্চ                                                সংবৃত
                মধ্যোচ্চ                                                অর্ধ-সংবৃত
              মধ্য-নিম্ন                  এা                            অর্ধ-সংবৃত
                   নিম্ন                                                বিবৃত

                                 প্রসৃত      বিবৃত  বর্তুল(প্রলম্বিত) ঠোঁট-ভঙ্গী ↑






বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনি



                                                                    
                      
                           স্বরবর্ণ (৭টি) __                      এা   
                            স্বরবর্ণ চিহ্ন __                           ৙঄   
                      স্বরবর্ণ চিহ্ন যোগ __  ক৹   কা    কী   কু    ক৙   ক৙঄   কৗ
                                 প্রচলিত __      কা    কি   কু    কে  ক্যা   কো

          প্রচলিত ব্যবস্থায় অ-এর কোনও বাহ্যিক স্বরচিহ্ন নেই৤ 



উচ্চারণ-স্থানের ক্রম অনুসরণ করে এই সাতটি স্বরবর্ণের নতুন সজ্জা হবে __
          এা      
              (পশ্চাৎ থেকে সম্মুখ অর্থাৎ কণ্ঠের দিক থেকে ক্রমে ওষ্ঠের দিকে অগ্রসর হবে)



ব-১৯.২ব্যঞ্জনবর্ণ __ 
          উচ্চারণ-স্থানের ধারাবাহিকতা অনুসারে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের নতুন সজ্জা হবে:__ 
         
          ক খ গ ঘ ঙ
         
          ট ঠ ড ঢ ড় ঢ় 
          চ ছ জ ঝ শ
          ন র ল স
          ত থ দ ধ
          প ফ ব ভ ম      ___ ৩১
         
         
         
                            ___ ৩৫

শেষের এই চারটি বর্ণ স্বাভাবিকভাবেই পূর্ণ বর্ণ নয়৤ এর মধ্যে
          হলন্ত বিকল্প বর্ণ ২টি = ঃ ৎ
আশ্রয়স্থানভাগী বিকল্প বর্ণ ২টি = ং ঁ

এই চারটি বিকল্প বর্ণ যে-মূল বর্ণসমূহের অুগত তা নিচে দেখানো হল৤ বর্ণমালায় এদের সজ্জা হবে, প্রদর্শিত তেমনি ক্রম অনুসরণ করেই৤


বাংলা নতুন-বানান -৪৫

          অনুগ-পরিবর্ত
             ঃ -- হলন্ত বিকল্প বর্ণ
             ং -- আশ্রয়স্থানভাগী হলন্ত বিকল্প বর্ণ     অনুনাসিক বা  নাসিক্য
               -- আশ্রয়স্থানভাগী বিকল্প বর্ণ            অনুনাসিক বা  নাসিক্য
              --  হলন্ত বিকল্প বর্ণ

সুতরাং, মোট ১০টি বিকল্প বর্ণ বর্জন করে এবং একটি নতুন স্বরবর্ণ তৈরি করে যা দাঁড়াল, তা হল:--
          বাংলা বর্ণমালা -- স্বরবর্ণ=, ব্যঞ্জনবর্ণ=৩৫, মোট-- ৭+৩৫=৪২
           
এর মধ্যে সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ হবে -- ঙ      ৎ ,  এই ৪টি বর্ণের৤ 




ব্যঞ্জনবর্ণের নতুন সজ্জা হল -- 

হ ক খ গ ঘ ঙ য় ট ঠ ড ঢ ড় ঢ় 
চ ছ জ ঝ শ ন র ল স ত থ দ ধ 
প ফ ব ভ ম ঃ ং ঁ ৎ 


মোট = ৩৫



যে পদ্ধতিতে এগুলি পড়া হয়, অর্থাৎ ড়=ড-এ শূন্য ড়,    য়=অন্তঃস্থ য়(অ),    জ=বর্গীয় জ,
শ=তালব্য শ,    র=ব-এ শূন্য র,    স=দন্ত্য স--   এভাবে পড়ার আর দরকার নেই৤
এসকল পূর্ণ বর্ণের ক্ষেত্রে উদ্দিষ্ট ধ্বনিটিই সরাসরি কেবলমাত্র উচ্চারণ করলে হবে৤



কণ্ঠধ্বনির কম্পাঙ্কের পাল্লা  ৩০০~৩৪০০ সা./সে.  
   Voice Frequency range  300~3400 c/s.



বাংলা নতুন-বানান -৪৬






কণ্ঠধ্বনির কম্পাঙ্কের পাল্লা  ৩০০~৩৪০০ সা./সে. 
      Voice Frequency range  300~3400 c/s.



বাংলা নতুন-বানান -৪৭

ব-১৯.৩ বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ -- উচ্চারণ-স্থান অনুযায়ী অবস্থান 




বাংলা নতুন-বানান   পৃষ্ঠা--৪৮  তৃতীয় অংশ
            ৽ ৽




পরবর্তী তৃতীয় অংশ দেখুন:  







সর্বশেষ পরিমার্জন  ১৪/১০/২০১৮








No comments:

Post a Comment